৯.১ জৈব অণু (biomolecule)
সজীব কোষ অসংখ্য অণু দিয়ে গঠিত। এই অণুগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্ষুদ্র অণু এবং বৃহৎ অণু যেগুলো একত্রে জৈব অণু বলে পরিচিত। সাধারণত 25 টিরও বেশি মৌলিক পদার্থ নিয়ে এসব জৈব অণু গঠিত এদের ভিতরে ছয়টি মৌলিক পদার্থ জৈব অণুর সাধারণ উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এগুলো হলো কার্বন (C), হাইড্রোজেন (H), নাইট্রোজেন (N), অক্সিজেন (০), ফসফরাস (P) ও সালফার (S)। এসব মৌলিক পদার্থের ইংরেজি বানানের আদ্যাক্ষর নিয়ে যে শব্দসংক্ষেপ করা হয়েছে, তা হলো CHNOPS। তোমরা ইতোমধ্যে কোষ সম্বন্ধে বিস্তারিত পড়েছ, এই জৈব অণু দিয়েই সকল কোষ তৈরি হয়। জীবজগতের গঠনের প্রেক্ষিতে CHNOPS-এর ছয়টি পরমাণুর ভেতরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু হচ্ছে কার্বন, এ কারণে বলা হয়ে থাকে পৃথিবীতে জীবনের ভিত্তি হচ্ছে কার্বন।
চিত্র ৯.১: মিলার-উরের অজৈব অণু থকে জৈব অণু সংশ্লেষণ করার পরীক্ষা।
জীবদেহ কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, নিউক্লিয়িক অ্যাসিড এবং লিপিড নামে চার ধরনের জৈব রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে গঠিত। এদের ভেতর প্রোটিন ও নিউক্লিয়িক অ্যাসিড এই দুটি জৈব রাসায়নিক পদার্থ ছাড়া সজীব বস্তু তৈরি হয় না। এর থেকে ধারণা করা যায়, সৃষ্টির শুরু থেকেই জৈব অণুগুলো তৈরি হয়েছিল এবং বিভিন্ন রাসায়নিক ক্রিয়ার ফলে সেগুলো সংযুক্ত হয়ে প্রথম কোষ তৈরি হয়। বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন যে বজ্রপাত অথবা ঘন ঘন বৈদ্যুতিক ঝড়, এবং শক্তিশালী সৌর বিকিরণ ইত্যাদি কোনো কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে যার ফলে আদি-পৃথিবীতে অজৈব অণু থেকে এই জৈব অণুগুলো তৈরি হয়েছিল। এ ধারণাকে প্রমাণ করার লক্ষ্যে 1953 সালে বিজ্ঞানী স্ট্যাইনলি মিলার এবং হ্যারল্ড উরে পরীক্ষাগারে একটি আদি পৃথিবীর কৃত্রিম রূপ তৈরি করেছিলেন (চিত্র ৯.১)। যেখানে পুরোপুরি আবদ্ধ একটি সিস্টেমে প্রাচীন পৃথিবীতে যেসব উপাদান ছিল, অর্থাৎ পানি, মিথেন, অ্যামোনিয়া এবং হাইড্রোজেনের মিশ্রণকে ক্রমাগত পরিচলন করেছিলেন। সেই সময়কার বজ্রপাতের অনুকরণে সেখানে বৈদ্যুতিক ডিসচার্জ করা হয়েছিল। এক সপ্তাহ পর সেখানে তাঁরা অ্যামিনো অ্যাসিড নামক জৈব অণুকে সংশ্লেষিত হতে দেখেন, অর্থাৎ তারা প্রমাণ করেন প্রাকৃতিক পরিবেশে অজৈব অণু থেকে জৈব অণু তৈরি হওয়া সম্ভব।
চিত্র ৯.২: চার ধরনের জৈব অণু
জীবদেহের মূল উপাদান, কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, নিউক্লিয়িক অ্যাসিড ও লিপিড যে জৈব রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে তৈরি হয় তাদেরকে কোষের জীবজ পলিমার বলে। যেমন- কার্বোহাইড্রেট সরল সুগারের, প্রোটিন অ্যামিনো অ্যাসিডের, নিউক্লিয়িক অ্যাসিড মনোনিউক্লিওটাইডের এবং লিপিড ফ্যাটি অ্যাসিডের জীবজ পলিমার। এই অধ্যায়ে আমরা এই চার ধরনের জৈব অণু (চিত্র ৯.২) সম্পর্কে আলোচনা করব।
৯.২ কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা
জীবদেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ গাঠনিক, সঞ্চয়ী উপাদান ও শক্তির ভান্ডার হচ্ছে কার্বোহাইড্রেট। কার্বোহাইড্রেট এক ধরনের জটিল প্রাকৃতিক জৈব যৌগ যা প্রধানত কার্বন (C), হাইড্রোজেন (H) ও অক্সিজেন (০) মৌল নিয়ে গঠিত। কার্বোহাইড্রেটে কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন পরমাণু 1:2:1 অনুপাতে যুক্ত থাকে। উদ্ভিদের সবুজ অংশে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় সূর্যালোকের উপস্থিতিতে ও ক্লোরোফিলের সহায়তায় কার্বন ডাইঅক্সাইড ও পানি থেকে কার্বোহাইড্রেট তৈরি হয়। আমাদের প্রতিদিনের খাবারের একটি বড়ো অংশ শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার। আমাদের শরীরে পুষ্টির সঙ্গে সম্পর্কিত মূল 7টি পুষ্টি উপাদানের (পানি, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, ফ্যাট, প্রোটিন, ভিটামিন এবংমিনারেলস) একটি হলো কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা। শর্করা আমাদের শরীরকে প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করে এবং অতিরিক্ত পরিমাণে উপস্থিত থাকলে তা শরীরে ফ্যাট বা চর্বি হিসেবে জমিয়ে রাখে। শরীরে শর্করার ভাঙনের পর নানা রকম ক্ষুদ্র সুগার অণুতে বিভক্ত হয় এবং পর্যায়ক্রমে ক্ষুদ্রতম অংশে এসে পৌঁছালে সেটি শরীরের নানা স্থানে শোষিত হয়।
চিত্র ৯.৩: গ্লুকোজের CnH2nOn ধরনের অণু C6H12O6
কয়েকভাবে কার্বোহাইড্রেটের শ্রেণিবিন্যাস করা যায়, একটি তোমরা সবাই জানো। এক ধরনের কার্বোহাইড্রেট স্বাদে মিষ্টি, দানাদার এবং পানিতে দ্রবণীয়-যেটি সুগার নামে পরিচিত। গ্লুকোজ (চিত্র ৯.৩) সুগারের একটি উদাহরণ। অন্যটি স্টার্চ, যেটি মিষ্ট নয়, অদানাদার এবং পানিতে অদ্রবণীয়। আমাদের পরিচিত উদ্ভিদ থেকে পাওয়া চাল, ময়দা, আলু ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে স্টার্চ রয়েছে।
কার্বোহাইড্রেটের আণবিক গঠন, আণবিক ওজন ও রাসায়নিক ধর্মের ভিত্তিতেও কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। এদের ভেতর সবচেয়ে ক্ষুদ্র এবং সরলতম এককের নাম মনোস্যাকারাইড (Monosaccharides) এটি অন্যান্য জটিল কার্বোহাইড্রেট তৈরির গাঠনিক একক হিসেবে কাজ করে। এদের সাধারণ সংকেত হলো CHO। এদের অণুতে কার্বন পরমাণুর সংখ্যা 5টি হলে তাকে পেন্টোজ সুগার বলে। ৯.৪ চিত্রে দুটি পেন্টোজ সুগারের অণু দেখানো হয়েছে, এর একটি ডিঅক্সিরাইবোজ সুগার এবং অন্যটি রাইবোজ সুগার। রাইবোজ এবং ডিঅক্সিরাইবোজ সুগার গঠনগত দিক থেকে একই কিন্তু পার্থক্য শুধু এই যে, ডিঅক্সিরাইবোজ সুগারের একটি কার্বনে অক্সিজেন নেই।
তোমরা নিউক্লিয়িক অ্যাসিড পড়ার সময় দেখতে পাবে এই পেন্টোজ সুগার জীবজগতের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জৈবিক অণু নিউক্লিয়িক অ্যাসিডের একটি অন্যতম প্রধান উপাদান।
কার্বোহাইড্রেটের শরীরবৃত্তীয় ভূমিকা :
১। কার্বোহাইড্রেট শরীরে শক্তি সরবরাহের প্রধান উৎস। খাদ্য হিসেবে কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করা হলে সেটি ভেঙে গ্লুকোজে রূপান্তরিত হয় এবং বেশিরভাগ কোষ শক্তির জন্য এই গ্লুকোজ ব্যবহার করে থাকে অথবা ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য যকৃত ও পেশিতে গ্লাইকোজেন হিসেবে সঞ্চিত থাকে।
২। কার্বোহাইড্রেট থেকে পাওয়া গ্লুকোজ মস্তিষ্ক ও কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের একমাত্র শক্তি সরবরাহকারী হিসেবে কাজ করে।
৩। কার্বোহাইড্রেট শরীরের পেশিতে শক্তি সরবরাহ করে থাকে। গ্লাইকোজেন, হৃৎপেশির শক্তির অন্যতম প্রধান উৎস।
৪ । প্রোটিনকে যেন তার নির্ধারিত গুরুত্বপূর্ণ শরীরবৃত্তীয় কাজ থেকে বিরত থেকে শক্তিতে রূপান্তরিত হতে না হয় কার্বোহাইড্রেট তার নিশ্চয়তা প্রদান করে। ৫। অপাচ্য কার্বোহাইড্রেট এবং সেলুলোজ, পেকটিন জাতীয় জটিল শর্করা মল তৈরিতে এবং নিষ্কাশনে সাহায্য করে।
৬। খাদ্যে যথেষ্ট ফাইবারসমৃদ্ধ জটিল কার্বোহাইড্রেড রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে।
৯.৩ নিউক্লিয়িক অ্যাসিড (nucleic acid)
নিউক্লিয়িক অ্যাসিড আসলে বৃহৎ জৈব অণু, যা প্রত্যেক জীবের জন্য অপরিহার্য। নিউক্লিয়াসের ক্রোমোজম ও রাইবোজোমে যে জৈব অণু থাকে, তাকে নিউক্লিয়িক অ্যাসিড বলে। নিউক্লিয়াস ও রাইবোজোম ছাড়াও মাইটোকন্ড্রিয়া ও প্লাস্টিডে নিউক্লিয়িক অ্যাসিড থাকে। নিউক্লিয়িক অ্যাসিড পেন্টোজ সুগার, নাইট্রোজেন বেস বা ক্ষারক, এবং ফসফোরিক অ্যাসিড দিয়ে গঠিত এক ধরনের জৈব অণু, যা জীবের বংশগতির ধারাসহ সব কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে।
নিউক্লিয়িক অ্যাসিড দুই প্রকার- ডিএনএ এবং আরএনএ।
৯.৩.১ ডিএনএ (DNA)
ডিএনএ বা ডি-অক্সিরাইবো নিউক্লিয়িক অ্যাসিড কোষের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য স্থায়ী রাসায়নিক অণু। এটি কোষের বা সামগ্রিকভাবে জীবের সমস্ত জৈবিক কাজ ও বংশগত বৈশিষ্ট্য ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ করে। কয়েক ধরনের ভাইরাস ছাড়া সব রকমের সজীব কোষেই ডিএনএ থাকে। ক্রোমোজোম ডিএনএ ও কিছু প্রোটিন দ্বারা তৈরি। ডিএনএ এই প্রোটিনের সঙ্গে পেঁচিয়ে লম্বা সুতার মতো তৈরি করে, যেটি ক্রোমোজোম নামে পরিচিত। এছাড়া মাইটোকন্ড্রিয়া, ও প্লাস্টিডের মধ্যেও ডিএনএ থাকতে পারে। নির্দিষ্ট প্রজাতির জীবকোষে ডিএনএ-এর পরিমাণ নির্দিষ্ট থাকে। DNA এক ধরনের রাসায়নিক জৈব যৌগের অণুগুলো নিউক্লিওটাইড নামক অনেকগুলো ছোটো অণু দ্বারা গঠিত। ৯.৫ চিত্রে ডিএনএ-এর গঠন দেখানো হয়েছে।
চিত্রটিতে দেখতে পাচ্ছ যে প্রতিটি নিউক্লিওটাইড একটি পেন্টোজ সুগার, একটি ফসফেট গ্রুপ এবং একটি নাইট্রোজেনাস ক্ষারক বা বেস দ্বারা গঠিত। নিউক্লিয়িক অ্যাসিডে দু ধরনের পেন্টোজ সুগার থাকে। এর একটি রাইবোজ সুগার এবং অন্যটি ডিঅক্সিরাইবোজ সুগার। ডিএনএ-এর পেন্টোজ সুগার হচ্ছে ডিঅক্সিরাইবোজ সুগার। ডিএনএ-এর চারটি নাইট্রোজেনাস বেস রয়েছে যেগুলো হচ্ছে অ্যাডেনিন (adenine), গুয়ানিন (guanine), সাইটোসিন (cytosine) ও থাইমিন (thymine)।
ডিএনএ দুই সূত্রবিশিষ্ট অসংখ্য নিউক্লিওটাইডের একটি সর্পিলাকার গঠন, এর একটি সূত্র অন্যটির পরিপূরক। একটি ডিএনএ অণুর দুটি ডিএনএ সূত্র বা স্ট্র্যান্ড একে অপরের চারপাশে পেঁচিয়ে একটি সর্পিল আকৃতি তৈরি করে যাকে ডাবল হেলিক্স গঠন (Double Helix Structure) হয়। বিজ্ঞানী ওয়াটসন ও ক্রিক (James Watson and Francis Crick) 1953 সালে ডিএনএ -এর ভৌত ও রাসায়নিক গঠন সম্পর্কে ডিএনএ ডবল হেলিক্স মডেল প্রস্তাব করেন যা তাদেরকে 1963 সালে নোবেল পুরস্কার এনে দেয়।
ডিএনএ-এর কাজ :
৯.৩.২ আরএনএ (RNA)
আরএনএ বা রাইবোনিউক্লিয়িক অ্যাসিড কোষের সাইটোপ্লাজমে মুক্ত অবস্থায় অথবা রাইবোজোমের সঙ্গে যুক্ত অবস্থায় থাকে। ডিএনএ-এর সঙ্গে আরএনএ-এর মূল পার্থক্য হচ্ছে এটি ডিএনএ-এর মতো দুই সূত্রবিশিষ্ট নয়, এটি নিউক্লিওটাইডের একক চেইন বা শিকল (চিত্র ৯.৬)। ডিএনএ- এর মতোই আরএনএ-এর নিউক্লিওটাইডে রয়েছে পেন্টোজ সুগার, অজৈব ফসফেট এবং একটি নাইট্রোজেনাস বেস। তবে এই পেন্টোজ সুগারটি হচ্ছে রাইবোজ সুগার। ডিএনএ-এর চারটি নাইট্রোজেনাস বেসের মতো এখানেও চারটি বেস রয়েছে। তবে আরএনএ-তে থাইমিনের বদলে ইউরাসিল (uracil) নামক একটি ভিন্ন নাইট্রোজেন বেস বা ক্ষার নিয়ে গঠিত।
কিছু সংখ্যক ভাইরাসের ক্ষেত্রে (যেমন- কোভিড ভাইরাস বা SARS-Cov-2.) DNA অনুপস্থিত। অর্থাৎ যে সমস্ত ভাইরাস DNA দিয়ে গঠিত নয় তাদের নিউক্লিক অ্যাসিড হিসেবে থাকে RNA। এসব ক্ষেত্রে RNA-ই বংশগতির বস্তু হিসেবে কাজ করে।
আরএনএ প্রধানত তিন প্রকার- রাইবোজোমাল আরএনএ (Ribosomal RNA or rRNA), বার্তাবহ আরএনএ (Messenger RNA or mRNA), এবং পরিবাহক আরএনএ (Transfer RNA or tRNA)। আমরা প্রোটিনের সংশ্লেষ বা গঠন সম্পর্কে পড়ার সময় এই আরএনএগুলোর কাজ সম্পর্কে একটি ধারণা পাব।
আরএনএ-এর কাজ:
৯.৪ প্রোটিন (Protein)
প্রোটিন জীবদেহের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ জৈব রাসায়নিক পদার্থ ও বৃহদাকার যৌগিক জৈব অণু। সর্বপ্রথম গেরিট মুলার 1838 খ্রিস্টাব্দে প্রোটিন শব্দটি প্রয়োগ করেন। একটি কোষের অভ্যন্তরে নানা প্রকার প্রোটিন তৈরি হয়, যেগুলো শরীরে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কোষের জৈব ক্রিয়া- বিক্রিয়া নিয়ন্ত্রিত হয় বিভিন্ন ধরনের এনজাইম, অ্যান্টিবডি ও হরমোন দ্বারা-এগুলো সবই প্রোটিন। এছাড়া দেহের টিস্যু এবং অঙ্গগুলোর গঠন, কার্যকারিতা এবং নিয়ন্ত্রণের জন্য এটি খুবই প্রয়োজনীয়। যেহেতু একাধিক অ্যামিনো অ্যাসিড সুবিন্যস্ত হয়ে একটি প্রোটিন তৈরি হয় তাই প্রোটিন সম্পর্কে জানার আগে আমাদের অ্যামিনো অ্যাসিড সম্পর্কে একটুখানি জেনে নিতে হবে।
অ্যামিনো অ্যাসিড (Amine Acid): 20 ধরনের অ্যামিনো অ্যাসিড (চিত্র ৯.৭) বিভিন্ন বিন্যাসে মিলে একটা প্রোটিনের প্রাথমিক গঠন তৈরি করে। প্রাথমিকভাবে প্রোটিন হলো অ্যামিনো অ্যাসিড দিয়ে তৈরি লম্বা একটি চেইন। অ্যামিনো অ্যাসিডের বিন্যাসের ভিন্নতার কারণে প্রতিটি প্রোটিনের প্রাথমিক গঠন একে অপর থেকে পৃথক হয়। তোমরা ইতোমধ্যে ডিএনএ'তে নিউক্লিওটাইডের বিন্যাস (ATGC) সম্বন্ধে জেনেছ। এই নিউক্লিওটাইডের বিন্যাসের উপরই অ্যামিনো অ্যাসিডের বিন্যাস নির্ভর করে। সাধারণত তিনটি বেইজ মিলে একটা অ্যামিনো অ্যাসিড যুক্ত হওয়ার সংকেত তৈরি করে। একটি অ্যামিনো অ্যাসিডের কার্বোক্সিল গ্রুপ পরবর্তী অ্যামিনো অ্যাসিডের আলফা অ্যামিনো গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পেপটাইড বন্ড তৈরি করে। এভাবে অসংখ্য অ্যামিনো অ্যাসিডের সংযুক্তির ফলে একটি পলিপেপটাইড চেইন বা প্রোটিন তৈরি হয়।
এখানে উল্লেখ্য যে, 20টি অ্যামিনো অ্যাসিডের ভেতর মানুষ 11টি তার শরীরে সংশ্লেষ করতে পারে, বাকি ৭টি খাদ্যদ্রব্য থেকে সংগ্রহ করতে হয়।
প্রোটিন সংশ্লেষ
৯.৮ চিত্রে প্রোটিনের সংশ্লেষ প্রক্রিয়া দেখানো হয়েছে। DNA থেকে RNA তৈরি করার সময় T নিউক্লিওটাইড রূপান্তরিত হয়েছে U তে। তিনটি তিনটি নিউক্লিয়াটিড একটি করে অ্যামিনো অ্যাসিড পলিপেপ্টাইড চেইনে সংযুক্ত করেছে।
চিত্র ৯.৮: প্রোটিন সংশ্লেষের বিভিন্ন ধাপ।
প্রোটিনের কাজ
(১) প্রোটিনযুক্ত খাবার আমাদের শরীরে শক্তি সরবরাহ করে এবং শারীরিক বৃদ্ধি ও রক্ষণাবেক্ষণ করে।
(২) কোষের ভেতরে এবং বাইরে অসংখ্য জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটাতে সহায়তা করে।
(৩) কিছু প্রোটিন হরমোন রাসায়নিক বার্তাবাহক, সেগুলো শরীরের টিস্যু এবং অঙ্গগুলোর মধ্যে যোগাযোগে সহায়তা করে।
(৪) রক্তে এবং অন্যান্য শারীরিক তরলগুলোতে অ্যাসিড এবং ক্ষারকের ঘনত্বকে নিয়ন্ত্রণ করতে এবং ভারসাম্য রক্ষা করতে প্রোটিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
(৫) বহিরাগত অণুজীবের সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রোটিন আমাদের দেহে অ্যান্টিবডি তৈরিতে সহায়তা করে।
৯.৫ নিপিড (lipid)
লিপিড বলতে কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের সমন্বয়ে গঠিত স্নেহজাতীয় পদার্থকে বুঝায়। লিপিড উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ জৈব রাসায়নিক পদার্থ। এটি কোষের গঠনে, শক্তি সংরক্ষণে, তাপ নিয়ন্ত্রণ এবং আন্তঃকোষীয় যোগাযোগ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে থাকে। 1943 সালে জার্মান বিজ্ঞানী Bloor সর্বপ্রথম Lipid শব্দটি ব্যবহার করেন। লিপিড সাধারণত প্রাণী ও উদ্ভিদদেহের তেল ও চর্বিরূপে থাকে। এটি উদ্ভিদদেহের বিভিন্ন অঙ্গাণু বিশেষ করে ফল ও বীজে অধিক পরিমাণে থাকে।
লিপিড পানিতে প্রায় অদ্রবণীয় তবে ইথার, অ্যালকোহল, বেনজিন, ক্লোরোফরম, অ্যাসিটোন, পেট্রোলিয়াম ইত্যাদি দ্রবণে দ্রবণীয়। লিপিড বর্ণ, স্বাদ ও গন্ধহীন, এর কোনো নির্দিষ্ট গলনাংক নেই, আণবিক ওজন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এর গলনাঙ্ক বৃদ্ধি পায়। লিপিডের আপেক্ষিক গুরুত্ব পানি থেকে কম, পানির চেয়ে হালকা বলে লিপিড পানিতে ভাসে। সাধারণ উষ্ণতায় কিছু লিপিড তরল এবং কিছু লিপিড কঠিন অবস্থায় থাকে। যেসব লিপিড কঠিন অবস্থায় থাকে তাদের স্নেহদ্রব্য বা ফ্যাট বলে এবং যেসব লিপিড তরল অবস্থায় থাকে সেগুলোকে তেল বলে।
লিপিড হাইড্রোফোবিক হওয়ার কারণে এটি কোষের মেমব্রেন হিসেবে কাজ করে। পৃথিবীব্যাপী করোনা অতিমারির জন্য দায়ী করোনাভাইরাসটির (চিত্র ৯.৯) লিপিড মেমব্রেন থাকার কারণে সাবান, জীবাণুনাশক বা কিছু অ্যালকোহল দিয়ে খুব সহজে এই ভাইরাসটির মেমব্রেন ভেদ করে তাকে অকার্যকর করা সম্ভব ছিল। সে কারণে কোভিড অতিমারি চলাকালীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সাবান দিয়ে হাত ধোয়া কিংবা জীবাণুনাশক দিয়ে হাত পরিষ্কার করার ব্যাপারে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল।
নিপিড-এর কাজ
(১) লিপিড প্রোটিনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে লিপোপ্রোটিন গঠন করে যেটি শক্তি উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত।
(২) ফসফোলিপিড নামে এক ধরনের লিপিড বিভিন্ন মেমব্রেন গঠনে উপাদান হিসেবে কাজ করে।
(৩) উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় এক ধরনের লিপিড বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
(৪) চর্বি ও তেল জাতীয় লিপিড উদ্ভিদ দেহে খাদ্য হিসেবে জমা থাকে। বিভিন্ন তেলবীজের অঙ্কুরোদগমের সময় লিপিড খাদ্যরূপে গৃহীত হয়।
(৫) মোম জাতীয় লিপিড পাতার বহিরাবরণে স্তর সৃষ্টি করে অতিরিক্ত প্রস্বেদন রোধ করে এবং বিভিন্ন পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকেও উদ্ভিদকে রক্ষা করে।
৯.৬ জৈব অণুসমূহের পারস্পরিক সম্পর্ক
তোমরা ইতোমধ্যে জেনেছ যে জীবদেহের প্রধান জৈব অণুগুলো হলো কার্বোহাইড্রেট, নিউক্লিয়িক অ্যাসিড, প্রোটিন, এবং লিপিড। এই প্রত্যেকটি জৈব অণু একে অপরের গঠনের সঙ্গে এবং জৈবিক কাজ সম্পন্ন করার ব্যাপারে পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। নিচে এই বিষয়ে সংক্ষিপ্তভাবে কিছু আলোচনা করা হলো:
কার্বোহাইড্রেট এবং নিউক্লিক অ্যাসিড: আমরা আলোচনায় জেনেছি যে জীবদেহের সব শারীরতাত্ত্বিক এবং জৈবিক কাজগুলো নিয়ন্ত্রণ করে থাকে ডিএনএ, তার একটি অন্যতম উদাহরণ হচ্ছে কোষ বিভাজন। ডিএনএ নামের এই নিউক্লিয়িক অ্যাসিড জীবদেহের জেনেটিক তথ্য ধারণ করে। ডিএনএ -এর গঠন যদি তোমরা খেয়াল করে দেখো, তাহলে দেখবে যে এটি ডিঅক্সিরাইবোজ নামে একটি পেন্টোজ সুগার দিয়ে গঠিত, যেটি একটি কার্বোহাইড্রেট।
কার্বোহাইড্রেট এবং লিপিড: কার্বোহাইড্রেট মাঝে মাঝেই গ্লুকোজে রূপান্তর করা হয় যেটি তাৎক্ষণিক শক্তি হিসেবে ব্যবহার করা হয়, কিংবা গ্লাইকোজেন হিসেবে যকৃত অথবা পেশিতে সংরক্ষণ করা হয়। বাড়তি গ্লুকোজ ট্রাইগ্লিসারাইড নামে একটি লিপিডে দীর্ঘমেয়াদি শক্তি হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়
কার্বোহাইড্রেট এবং প্রোটিন: কার্বোহাইড্রেট গ্লাইকোসাইলেশান নামে প্রক্রিয়াতে প্রোটিনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হয়ে প্রোটিনের গঠনে রূপান্তর করতে পারে।
প্রোটিন ও নিউক্লিয়িক অ্যাসিড প্রোটিন আমাদের শরীরের কাঠামোগত উপাদান তৈরি, এবং তারা প্রয়োজনীয় ক্রিয়া-বিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। ডিএনএ' তে সংরক্ষিত বার্তাগুলো প্রোটিন তৈরির মাধ্যমেই প্রকাশ পায়। হিস্টোন নামে এক ধরনের প্রোটিন নিউক্লিয়িক অ্যাসিডকে আবদ্ধ রাখতে সাহায্য করে।
প্রোটিন ও লিপিড: ফসফোলিপিড নামে একটি লিপিড অধিকাংশ কোষ অঙ্গাণুর আবরণ তৈরিতে প্রয়োজনীয় এবং প্রায়সময়েই লিপিড বাইলেয়ার বা দ্বি-স্তরবিশিষ্ট লিপিডের লেয়ার তৈরি করে। এই লিপিড বাইলেয়ারে প্রোটিন সংযুক্ত হয়ে এটি চ্যানেল, রিসেপ্টর বা ট্রান্সপোরটারের সৃষ্টি করে মেমব্রেনের ভেতর দিয়ে নানা ধরনের জৈব অণুর গমনাগমনের পথ উন্মুক্ত করে দেয়।।
তোমরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ জীবজগৎকে সচল রাখার জন্য জৈব অণুগুলো একে অন্যের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। এই সম্পর্কের মাঝে বিঘ্ন ঘটলে জীবজগতের কার্যক্রমে নানা ধরনের জটিলতার সৃষ্টি হয়।
Lorem ipsum dolor, sit amet consectetur adipisicing elit. Ducimus nihil, quo, quis minus aspernatur expedita, incidunt facilis aliquid inventore voluptate dolores accusantium laborum labore a dolorum dolore omnis qui? Consequuntur sed facilis repellendus corrupti amet in quibusdam ducimus illo autem, a praesentium.
1 hour ago
Lorem ipsum dolor, sit amet consectetur adipisicing elit. Ducimus nihil, quo, quis minus aspernatur expedita, incidunt facilis aliquid inventore voluptate dolores accusantium laborum labore a dolorum dolore omnis qui? Consequuntur sed facilis repellendus corrupti amet in quibusdam ducimus illo autem, a praesentium.
1 hour ago
Lorem ipsum dolor, sit amet consectetur adipisicing elit. Ducimus nihil, quo, quis minus aspernatur expedita, incidunt facilis aliquid inventore voluptate dolores accusantium laborum labore a dolorum dolore omnis qui? Consequuntur sed facilis repellendus corrupti amet in quibusdam ducimus illo autem, a praesentium.
1 hour ago
Lorem ipsum dolor, sit amet consectetur adipisicing elit. Ducimus nihil, quo, quis minus aspernatur expedita, incidunt facilis aliquid inventore voluptate dolores accusantium laborum labore a dolorum dolore omnis qui? Consequuntur sed facilis repellendus corrupti amet in quibusdam ducimus illo autem, a praesentium.
1 hour ago
Lorem ipsum dolor, sit amet consectetur adipisicing elit. Ducimus nihil, quo, quis minus aspernatur expedita, incidunt facilis aliquid inventore voluptate dolores accusantium laborum labore a dolorum dolore omnis qui? Consequuntur sed facilis repellendus corrupti amet in quibusdam ducimus illo autem, a praesentium.
1 hour ago
Lorem ipsum dolor, sit amet consectetur adipisicing elit. Ducimus nihil, quo, quis minus aspernatur expedita, incidunt facilis aliquid inventore voluptate dolores accusantium laborum labore a dolorum dolore omnis qui? Consequuntur sed facilis repellendus corrupti amet in quibusdam ducimus illo autem, a praesentium.
1 hour ago
Lorem ipsum dolor, sit amet consectetur adipisicing elit. Ducimus nihil, quo, quis minus aspernatur expedita, incidunt facilis aliquid inventore voluptate dolores accusantium laborum labore a dolorum dolore omnis qui? Consequuntur sed facilis repellendus corrupti amet in quibusdam ducimus illo autem, a praesentium.
1 hour ago
Lorem ipsum dolor, sit amet consectetur adipisicing elit. Ducimus nihil, quo, quis minus aspernatur expedita, incidunt facilis aliquid inventore voluptate dolores accusantium laborum labore a dolorum dolore omnis qui? Consequuntur sed facilis repellendus corrupti amet in quibusdam ducimus illo autem, a praesentium.
1 hour ago
Lorem ipsum dolor, sit amet consectetur adipisicing elit. Ducimus nihil, quo, quis minus aspernatur expedita, incidunt facilis aliquid inventore voluptate dolores accusantium laborum labore a dolorum dolore omnis qui? Consequuntur sed facilis repellendus corrupti amet in quibusdam ducimus illo autem, a praesentium.
1 hour ago
Lorem ipsum dolor, sit amet consectetur adipisicing elit. Ducimus nihil, quo, quis minus aspernatur expedita, incidunt facilis aliquid inventore voluptate dolores accusantium laborum labore a dolorum dolore omnis qui? Consequuntur sed facilis repellendus corrupti amet in quibusdam ducimus illo autem, a praesentium.
1 hour ago